বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা: পশ্চিমবাংলায় যে দলটি ৩৪ বছর ক্ষমতায় ছিল, এ বছর বিধানসভা নির্বাচনে সেই সিপিএম একটিও আসন পায়নি। ভোট পেয়েছে সাকুল্যে ৪.৭৩ শতাংশ। সেই সিপিএমের আজব দাবি শোনা গেল তাদের ভোট–বিশ্লেষণে। সেখানে তাদের তরফে দাবি করা হয়েছে, সিপিএম এবং তাদের জোট সংযুক্ত মোর্চা (পুরো বামফ্রন্ট, কংগ্রেস এবং আইএসএফ) এই নির্বাচনে তৃণমূল এবং বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। নির্বাচনের ফলে তৃণমূল জিতলেও বিজেপি হেরেছে। নির্বাচনের প্রচারে তৃণমূলের বিরুদ্ধে যেমন তারা প্রচার করেছে, তেমনই বিজেপির বিরুদ্ধেও প্রচার করেছে। এর অর্থ, বিজেপির পরাজয়ে সিপিএমের তীব্র রাজনৈতিক প্রচারের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। তাই বিজেপির পরাজয়ে সিপিএমেরই নৈতিক জয় হয়েছে।
সিপিএমের এমন আজব বিশ্লেষণ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে। সিপিএমের বিশ্লেষণ সম্বন্ধে বিজেপি কোনও প্রতিক্রিয়া না জানালেও তৃণমূলের বক্তব্য, অবোধের গোবধে আনন্দ। অন্যদিকে, এমন আজব বিশ্লেষণ নিয়ে সিপিএমের অভ্যন্তরেও কানাঘুষো শুরু হয়ে গিয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, ‘বিশ্লেষণটা কুড়ি পাতার খসড়া। আর পুরোটাই স্ববিরোধিতায় পূর্ণ।’ সেই পর্যালোচনা রিপোর্ট নিয়েই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র হাজির হয়েছেন রাজ্য কমিটির বৈঠকে। শনিবার শুরু হয়েছে এই ভার্চুয়াল বৈঠক। শেষ হবে রবিবার। দু’দিনের বৈঠকে বাংলায় সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে সিপিএমের বিপর্যয়ের কারণ নিয়ে পর্যালোচনা হওয়ার কথা। যা শুরু হয়েছে এদিন। তবে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য আজব বক্তব্য নিয়ে সূর্যকান্তবাবু প্রস্তুত থাকলেও দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি কিন্তু রেয়াত করেননি বাংলার নেতাদের।
সীতারাম ইয়েচুরি এদিন বাংলার সিপিএম নেতাদের দিকে আঙুল তুলে সরাসরি বলেন, ‘বাংলার গ্রাউন্ড রিয়েলিটি সম্পর্কে কোনও ধারণাই ছিল না আপনাদের।’ তিনি পরিষ্কার জানিয়েছেন, মাটির সঙ্গে অস্বাভাবিক দূরত্ব বেড়ে গিয়েছে রাজ্য নেতাদের। ওপর–ওপর ধারণা থেকেই সবাই নির্বাচনে গিয়েছেন। তাই এই ব্যর্থতা। মানুষের মনের খবর রাখেননি কোনও নেতাই। এই সময় সীতারাম ইয়েচুরির বক্তব্যের বিরোধিতা করতে চেয়েছিলেন সূর্যকান্তবাবু। কিন্তু তাঁর সমস্ত উদ্যোগই মাঠে মারা যায়। সূর্যবাবুর কোনও কথাই সীতারাম শুনতে চাননি।
তাঁর স্পষ্ট কথা, সংযুক্ত মোর্চা গড়া নিয়েও স্বচ্ছতা দেখাতে পারেননি সিপিএম নেতারা। কেউ কেউ জোটের বিরুদ্ধে ছিলেন। আবার, কেউ কেউ জোটের পক্ষে ছিলেন। ফলে সাধারণ মানুষের কাছে এই জোট নিয়ে একটা ধোঁয়াশা ছিল। দলের নেতাদের একাংশের মত, জোটে আইএসএফ–কে নেওয়াটা সিপিএমের আদর্শের পরিপন্থী হয়েছে। তাই এই জোট মানুষের সমর্থন পায়নি।
এদিনের পর্যালোচনা থেকে পরিষ্কার, সিপিএমের বঙ্গ নেতারা এক প্রকার স্বীকারই করে নিয়েছেন, বাংলার মানুষের মনের ভাষা বুঝতে ভুল করেছে সিপিএম। তাই নির্বাচনে এবার শূন্য হাতেই ফিরতে হয়েছে কমরেডদের।